ফিরে যেতে চান

ভূমিকা

পদ্মা নদীর উত্তর পাড়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রাজশাহী শহর অবস্থিত। এই শহরটির নামকরণ ‘রাজশাহী’ কেন হলো সে সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা যায় না। কেউ কেউ বলেন, এক সময় অনেক হিন্দু রাজা, জমিদার ও মুসলিম সুলতানগণ এলাকাটি শাসন করেছেন বলে শহরটির নামকরণ হয়েছে ‘রাজশাহী’। ইংরেজ লেখক বøকম্যান সাহেব লিখেছেন, পঞ্চদশ শতকে গৌড়ের মুসলিম শাসক ভাতুড়িয়ার জমিদার রাজা গণেশের হস্তগত হওয়ার সময়কাল থেকেই স্থানটির নামকরণ হয় ‘রাজশাহী’। অপরদিকে ডবø্যু, ডবø্যু হান্টার তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন নাটোরের রাজা রামজীবনের জমিদারী ‘রাজশাহী’ নামে পরিচিত ছিল ইংরেজ শাসকেরা এই শহরের নামকরণ করতে সেই নামটিই পরবর্তীকালে ব্যবহার করেন।

রাজশাহীর নামকরণ বিষয়ে নিশ্চিত কোন কথা না বলা গেলেও একথা বলা যায় যে, ‘রামপুর’ এবং ‘বোয়ালিয়া’ নামের দুটি বৃহৎ গ্রামের সমন্বয়ে এই শহরটি গড়ে উঠে। এই গ্রাম দুটির প্রথম উল্লেখ আমরা পাই মীর গোলাম হুসায়েনের লেখা ‘সিয়ার আল মুতাক্ষরীণ’ নামক গ্রন্থে। সেখানে লেখা হয়েছে, অষ্টাদশ শতকের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে মারাঠা আক্রমণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে বেশ কিছু সংখ্যক লোক নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পদ্মা নদী (গঙ্গা নদী) পার হয়ে এই রামপুর-বোয়ালিয়ায় এসে বসতি স্থাপন করেন।

অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, মুর্শিদাবাদ থেকে তথাকার অধিবাসীদের আসার পূর্বেই রামপুরবোয়ালিয়াতে ওলন্দাজ বণিকেরা একটি ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। এখানে ওলন্দাজদের যে ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল, তার সাক্ষ্য পদ্মা তীরে অবস্থিত প্রাচীন কীর্তি-বড়কুঠি। পরবর্তীকালে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থানটি তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলেন। ইংরেজ শাসনামলে স্থানটির গুরুত্ব এতই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, তাঁরা এখানে একজন আবাসিক অফিসার পর্যন্ত নিযুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।

এক কালের বরেন্দ্রভূমির মধ্যমণি একালের বৃহত্তর রাজশাহী জেলা। এই রাজশাহীতে গড়ে উঠেছে রামপুর-বোয়ালিয়া গ্রামের সমন্বয়ে প্রথমে থানা, পরে জেলা শহর রাজশাহী। রাজশাহী জেলা শহরে রূপান্তরিত হবার পূর্বে রানি ভবানীর স্মৃতি বিজড়িত নাটোরই ছিল এতদঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র। ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ডবøু ডবøু হান্টারের বিবরণী থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টীয় উনিশ শতকের প্রথম দিকে নাটোরের আশে-পাশের নদী-নালাগুলি ভরাট হয়ে গেলে, পানি নিষ্কাশনে অসুবিধা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতার কারণে জলাশয়গুলো মশার জন্মস্থানে রূপ পেলে শহরে ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ব্যবসার কেন্দ্র হলেও, নাটোরের সঙ্গে অন্যান্য স্থানের সারা বছর নাব্য নদীর কোন সংযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীগণ অংশগ্রহণ করতে অসমর্থ হন। এসব কারণেই ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে নাটোরের প্রশাসনিক কেন্দ্র রামপুর-বোয়ালিয়া অর্থাৎ আধুনিক রাজশাহীতে স্থানান্তরিত হয়। রাজশাহী পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়। দ্বিতীয়ত এটি নদী তীরবর্তী হওয়ায় আবহাওয়াগত দিক থেকেও হয় স্বাস্থ্যকর।

রাজশাহী জেলা শহর গড়ে ওঠার ধারাবাহিকতায় এক সময় বিভাগীয় শহরের গৌরব অর্জন করে। স্থানীয় রাজা, জমিদার, আইনজীবী, শিক্ষক প্রমুখের প্রচেষ্টায় সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারায় এই শহরে গড়ে ওঠে স্কুল, কলেজসহ নানা ধরনের শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজশাহী এসোসিয়েশন, বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি ও জাদুঘর, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রাজশাহী শাখা প্রভৃতি। শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি গণ-গ্রন্থাগারও প্রতিষ্ঠিত হয়। পদ্মা নদী বিধৌত এই নগরীর জনসংখ্যা বর্তমানে ৫ লক্ষেরও উপরে। রাজশাহী নগরী সিটি কর্পোরেশন গঠনের মাধ্যমে মহানগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে।

ভৌগোলিক পট পরিবর্তনের ফলে, বলা চলে, অতিদ্রæত রাজশাহী একটি পূর্ণাঙ্গ শহরের রূপ লাভ করে। রাজশাহী শহরে অত্যল্পকালেই রাজা-জমিদার, ভুস্বামী, ব্যবহারজীবী, শিক্ষক প্রমুখ বিদ্যোৎসাহী, সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিপ্রেমী অভিজাত স¤প্রদায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং মুক্তহস্ত দানে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার প্রতিষ্ঠানসহ জনহিতৈষণামূলক সংগঠন গড়ে উঠতে শুরু করে, যার কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অদ্যাবধি এই রাজশাহী নিয়ে কোন পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ প্রণীত হয়নি। কালীনাথ চৌধুরীর ‘রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ (১৯০১), কাজী মোহম্মদ মিছেরের ‘রাজশাহীর ইতিহাস (১ম, ২য় খÐ)’ (১৯৬৫), কাজী রওশন আলী ও সাইফুদ্দীন চৌধুরী সম্পাদিত ‘ বিভাগীয় গাইড রাজশাহী’ (১৯৯৫), এবনে গোলাম সামাদের ‘রাজশাহী ইতিবৃত্ত’ (১৯৯৯), সফর আলী আকন্দ সম্পাদিত ‘Rajshahi Past and Present’ (১৯৮৩) গ্রন্থগুলিতে রাজশাহীর ইতিহাস সম্পর্ণূভাবে গ্রন্থিত হয়েছে এমন দাবি করা যায় না। R.G. Collingwood এর ভাষায় re-enactment of past experience পুরোপুরি এসব প্রকাশনায় উপস্থাপিত হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। এজন্য, রাজশাহীকে নিয়ে নানা কৌণিকে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেই লক্ষেই ‘রাজশাহী মহানগরীর কথা’ শিরোনামে মো. আনারুল হক (লেখক নাম আনারুল হক আনা) বর্তমান গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থকার নিজেকে পেশাদার ইতিহাসকার মনে করেন না; সে দাবি তাঁর পক্ষ থেকেও নেই। খানিকটা আন্তর প্রেরণায়ই তিনি তাঁর গ্রন্থ রচনা করেছেন। ‘কম্পাইলড ওয়ার্কস’ বললেও ইতিহাস গ্রন্থ হিসেবে এর মর্যাদা আদৌ ক্ষুণœ হবে না বলে আমি মনে করি। গ্রন্থখানির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলো ‘রাজশাহীর কথা’ নামে। মফস্বল শহর থেকে প্রকাশিত কোন গ্রন্থের সংস্করণ হওয়া একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা তো বটেই।

রাজশাহীর বিষয়ে কৌতুহলী গবেষক-পাঠকগণের নিকট ‘রাজশাহীর কথা’ সমাদৃত হোক এই প্রত্যাশা করি।

 

1 †deªæqvwi 2018

Dckni, ivRkvnx

W. mvBdzÏxb †PŠayix

AemicÖvß cÖ‡dmi, †dvK‡jvi wefvM, ivRkvnx wek¦we`¨vjq

eZ©gv‡b cÖ‡dmi I wWb

¯‹zj Ae wjev‡ij AvU©m

ivRkvnx weÁvb I cÖhyw³ wek¦we`¨vjq, bv‡Uvi